কিছুদিন যাবৎ একটা প্রশ্ন নিয়ে গভীর চিন্তায় আছি। প্রশ্নটা খুব একটা কঠিন না। বরং বলা যায় খুব সোজা।যদিও উত্তরটা আমার কাছে ততোটা সোজা না। প্রশ্নটা হলো এই সময়ে সবাই চায় CREATIVE কিছু একটা করতে, তাহলে এই দেশের শতকরা কতজন মানুষ CREATIVE? প্রশ্নটা আমি করি আমার এক আঁতেল কিসিমের বন্ধুকে। সে অত্যন্ত মনোযোগের সাথে আমার কথা শুনে। আমি খুশি হয়ে কথার ফাঁকে ফাঁকে চা এর অর্ডার দেই, এবং সে তাঁড়িয়ে তাঁড়িয়ে চা টা উপভোগ করে আর তৃপ্তির একটা বিদ্ঘুটে শব্দ করতে করতে আমার কথা শুনে। পুরো আধা ঘন্টার লেকচার শোনার পর সে গলায় জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব এনে আমাকে বলে, "বুঝলাম!" আমি খুশিতে গদগদ হয়ে বলি, "কি বুঝলি?" সে তখন বলে, "তোর এখন কাম-কাজ নাই, তাই মাথায় আজাইড়া চিন্তা ঘুরে।" আমি পুরোপুরি হতাশ হয়ে সেখান থেকে সরে পরি। কিন্তু আমি সরে পরলে অ প্রশ্ন তো আর আমার মাথা থেকে সরে যায় না। আমি তখন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অন্য কারো সন্ধানে বের হই। আর তখনই আমার জীবন এর অন্যতম ভুলটা আমি করি।
সেদিন ছিল বুধবার। বেলা বাড়লেও আমার ঘুম সহজে ভাঙ্গে না। এজন্য আমি দুনিয়ার শ্রেষ্ট অলস উপাধি অনেক আগেই পেয়েছি। বিছানায় এপাশ-অপাশ করে ঘুমিয়ে যখন আমি ক্লান্ত তখন ঘুম ভাঙল। চোখ মেলে যা দেখলাম তা রিতিমতো ভয়াবহ। আমার মাথার কাছে একমাত্র ভাগ্নে দাঁড়ানো। হাতে আমার মোবাইল ফোন। এই ভাগ্নের নাম যোবায়ের। বয়স ১১ বছর। স্থানীয় স্কুলে ক্লাশ 5 এ পড়ে। ভীষণ বাঁদর প্রজাতির ছেলে। শুধু বাঁদর প্রজাতির ছেলে বললে তার পুরো বর্ননা দেওয়া হয় না। বাঁদরামির জন্য নোবেল দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে সে তা অবশ্যই পেত বলে আমার ধারণা। আমি চিন্তা করছি নোবেল কমিটিকে এই বিষয় অবগত করে একটা চিটি লিখব। কিন্তু, যখন ব্যস্ত থাকি ঠিক তখন মনে পরে, আর যখন ব্যস্ত থাকি না তখন বেমালুম ভুলে যাই। যোবায়ের আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলল "Good morning মামা!" এবং সাথে সাথে শুঁধরে নিয়ে বলল "Good noon মামা!" রাগে আমার গা জ্বলে গেল। ইচ্ছা করছিল কষে একটা চড় লাগাই। কিন্তু সাহস করতে পারলাম না। তাই কোন্মতে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলি "Good noon." তারপর জিজ্ঞেস করি, "আমার মোবাইল তোমার হাতে কেন?" সে চোখ কপালে তুলে উল্টো প্রশ্ন করল, "কেন? ধরা কি নিষেধ নাকি?" আমি তখন অনেক কষ্টে রাগ চেপে বললাম, "না, তা না। কিন্তু মোবাইলে কর কি?" যোবায়ের উত্তর দিল, "Net surfing করি।" আমি বললাম, "কি দেখো?" উত্তর এলো "তুমি বুঝবা না, Flickr এ ছবি দেখি, তোমার বোঝার কথাও না। এগুলো CREATIVE মানুষের কাজ।" রাগে মাথায় আগুন ধরে গেল। এতটুকু পিচ্চি! আমাকে অপমান! আমার মাথায় তখন পুরোন প্রশ্নটা জেগে উঠে। আমি বাঁদরটাকে জব্দ করার জন্য বলি আচ্ছা বলত, "এই দেশের শতকরা কতজন মানুষ CREATIVE?" যোবায়ের তাচ্ছিলের একটা ভঙ্গি করে বলে, "তুমি বাদে সবাই কমবেশী CREATIVE।" আবার অপমানিত হয়ে আমি টয়লেটে গিয়ে আত্নরক্ষা করি। বের হয়ে দেখি আম্মু দাঁড়িয়ে আছে বাজারের ব্যাগ হাতে। আমাকে বলল, "যা তো, দুই কেজী গরুর মাংস নিয়ে আয়।" আদেশ মাথা পেতে নিয়ে বের হওয়ার সময় যোবায়ের বায়না ধরলো সে অ যাবে। অগত্যা তাকে নিয়ে বের হলাম। মাংসের দোকানে গিয়ে দেখি কবি বদিউল দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে একগাল হেসে বলল, "নতুন একটা কবিতা লিখেছি, শুন।" বলে আমার অনুমতির তোয়াক্কা না করে আবৃত্তি শুরু করল;
" তোমার ওই ডাগর চোখে হারিয়েছিলাম ভয়,
ভুল ভাঙলো -
অমন চোখ গরুরও আছে,
তোমার একার নয় "
আমি কিছু না বুঝেই বললাম "ভালো কবিতা!" কারন, পূর্ব অভিজ্ঞতা বলে বদিউলকে না ঘাটানোই ভালো। ঘাটালে সেদিন তার দীর্ঘ বক্তিতা শুনতে হয় আর তা শোনার ধৈর্য পৃথিবীর কারো আছে কিনা তা আমার জানা নেই। ফেরার সময় মনে পড়লো আম্মু ডিমও নিতে বলেছিল। আমি সাধারণত যে দোকান থেকে কেনাকাটা করে থাকি সেখানে দাম বেশী রাখে তাই আমি অন্য দোকান থেকে ডিম নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। দোকানে যাওয়ার সাথে সাথে যোবায়ের আইসক্রিম এর বায়না ধরে। আমি কিনে দিবো না বলায় সে আমাকে বলে তোমার মতো মামা থাকার চাইতে না থাকাই ভালো। আমি তা অগ্রাহ্য করে যোবায়েরকে আইসক্রিম না কিনে দিয়ে বাসার দিকে হাঁটতে থাকি। যখন আমি নিয়মিত যে দোকান থেকে থেকে কেনাকাটা করি অই দোকানের সামনে আসি, তখন যোবায়ের দাঁড়িয়ে পড়ে। আর দৃঢ় কন্ঠে বলে, "আমাকে আইসক্রিম না কিনে দিলে তুমি যে অন্য দোকান থেকে ডিম কিনেছো তা আমি দোকানদার মামাকে বলে দিব" আমি তো পুরোপুরি হতভম্ব। বলে কি! মানসম্মান তো পুরো চলে যাবে। দোকানদার অনেক দিনের পরিচিত। উনি কি মনে করবেন। আমি তখন উপায় না দেখে যোবায়েরকে আইসক্রিম কিনে দেই। আর বুকে ফুঁ দিতে দিতে বাসায় ঢুকি।যোবায়েরকে বিশ্বাস নেই। আইসক্রিম পেয়েছে, কিন্তু যেহেতু সে বাঁদরামীতে প্রচন্ড CREATIVE, শুধু মজা করার জন্য বলে দিতেই পারে। আর বলে দিলে আমি হাতেনাতে ধরা খেয়ে যাবো। যাইহোক বাঁদরটা আইসক্রিম নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এসব কিছুই করলো না। ঘরে ফিরে আমি আবার শুয়ে পড়লাম আর চিন্তা করতে লাগলাম, যোবায়ের যা বলেছে তা একেবারে খারাপ না। আমি বাদে সবাই মোটামুটি CREATIVE। বদিউল কবিতা লিখতে পারে, ছদরুল গল্প লিখে, যোবায়ের বাঁদরামি করতে পারে, মামুন পারে প্রেম করতে। প্রেম করতেও নাকি CREATIVITY লাগে। মামুন বলে, "দোস্ত, একের পর এক মিথ্যা না বললে প্রেম টিকে না, আর মিথ্যা বলতে CREATIVITY লাগে।" শুধু আমি কিছু পারি না। আমার CREATIVITY নাই। চারপাশে এতো এতো CREATIVE মানুষের ভীরে আমি CREATIVITY দেখানোর সুযোগ খুঁজি। কিন্তু, পারলাম আর কই!
০৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী